শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস:
বাম দিক থেকে হলি আর্টিজান হামলার আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, বড় মিজান ও রাজীব গান্ধী।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার মামলায় ২১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজন ওইদিনই ঘটনাস্থলে নিহত হন। আটজন পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হন। জীবিত আটজনের মধ্যে রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ আটকের পর কারাগারে। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন নামের দুইজন চার্জশিটে পলাতক দেখানো হয়েছে।
রাজীব গান্ধী
গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী সন্দেহে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধীকে (৩৩) গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি রাতে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) একটি দল টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে বলে। এরপর পুলিশ জানায়, গুলশান হামলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর হামলাসহ ২২টি হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত রাজীব গান্ধী।
পুলিশ আরও জানায়, রাজীব গান্ধীর পৈত্রিক বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পশ্চিম রাঘবপুরের ভূতমারিঘাট এলাকায়। নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়ার আগে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে থাকলেও স্ত্রী-সন্তানরা থাকতো গাইবান্ধায়। তবে নব্য জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়েই ‘হিজরত’ করে সে। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি আসে ঢাকায়। তখন থেকে ঢাকার বিভিন্ন আস্তানাতেই থাকতো। সংগঠনের প্রয়োজনে সে সুভাষ, শান্ত, টাইগার, আদিল, জাহিদ প্রভৃতি নামে আত্মগোপন করে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
বড় মিজান
গুলশানে হলি আর্টিজান হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে জেএমবির সক্রিয় সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাকার একটি আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পুলিশ জানায়, বড় মিজান নব্য জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জের প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আগে তিনি জুনুদ আত তাওহিদ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনের প্রধান সামরিক কমান্ডার ছিলেন। পরে তামিম চৌধুরীর মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে যুক্ত হন। বড় মিজানের নেতৃত্বেই নব্য জেএমবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তকেন্দ্রিক অস্ত্র ও গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক জেল চোরাচালানের একটি চক্র গড়ে তোলে। এই চক্রই জেএমবির প্রায় সব অস্ত্র, ডেটোনেটর ও বিস্ফোরক জেল সরবরাহ করছিল। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও পিস্তলগুলো বড় মিজানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং তামিম চৌধুরীর কাছে পৌঁছানো হয়।
রাকিবুল হাসান রিগ্যান
২০১৬ সালের গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পুলিশের অভিযানে নয়জন নিহত হন। সে অভিযানে আহত অবস্থায় আটক হন রাকিবুল হাসান রিগ্যান। তার বাড়ি বগুড়া শহরের সরকারি আজিজুল হক কলেজ-সংলগ্ন জামিলনগরে। তিনি এক বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় বলে দাবি করেন তার মা।
রাকিবুলের মা আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য বগুড়া শহরে একটি কোচিং সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়।’
এরপর ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আসামি রাকিবুল হাসানকে হলি আর্টিজান মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে ৪ অক্টোবর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
হাতকাটা সোহেল মাহফুজ
গত বছরের ৭ জুলাই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পুষ্কনিপাড় এলাকার একটি আমবাগান থেকে উত্তরাঞ্চলীয় নব্য জেএমবি কমান্ডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ পুলিশ। পরে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
জানা যায়, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ছাত্র হিসেবে ছিলেন ভীষণ মেধাবী। প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া কখনও দ্বিতীয় হননি। ৫ম শ্রেণিতে বৃত্তিও পেয়েছিলেন। সেই মেধাবী ছাত্রটি কী করে দুর্ধর্ষ জঙ্গিনেতা হলো তা এখন এলাকাবাসীর বিস্ময়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মা ও গড়াই নদী বেষ্টিত একটি ইউনিয়ন হচ্ছে চর সাদিপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চর সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক রেজাউল করিম ওরফে রাজেম শেখের দশ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ চতুর্থ। এটা অবশ্য তার আসল নাম নয়। এই নামে এলাকার লোকজন কেউ তাকে চেনে না। প্রকৃত নাম হচ্ছে আব্দুর সবুর খান ওরফে হাসান। পরিবারের লোকজন হাসান নাম রাখলেও স্কুল শিক্ষকরা ভর্তিও সময় নাম রাখেন আব্দুর সবুর খান।
ওই সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, হাতকাটা মাহফুজ জেএমবির ভারত শাখার প্রধান ছিল। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়া গড় বিস্ফোরণের পর ভারতীয় সরকার তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে।
হাদিসুর রহমান সাগর
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অভিযোগ চলতি বছরের ২১ মার্চ হাদিসুর রহমান সাগরকে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, হাদিসুর রহমান সাগর নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি নেতা এবং গুলশান হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম সমন্বয়ক ও অস্ত্রের জোগানদাতা। সে জয়পুরহাটের সদর থানার কয়রাপাড়ার হারুন অর রশিদের ছেলে।
রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা
রাজধানীর হলি আর্টিজানে হামলার ‘পরিকল্পনাকারী’ আসলাম হোসাইন ওরফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ গত বছরের ২৮ জুলাই ভোরে নাটোরের সিংড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।
জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কাঞ্চনপুর গ্রামে আসলাম একটি কিন্ডারগার্ডেনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর ১৩ বছর আগে রাজশাহী জেলার পবা থানায় নদাপাড়ায় নানা সেকেন্দার হাজীর বাড়িতে চলে যান। এরপর আসলাম নানা বাড়ি থেকেই পড়াশুনা করতেন। বছরে মাঝে মধ্যে কাঞ্চনপুর গ্রাম আসতেন।
Leave a Reply